এবার হাসপাতালে নানান অনিয়ম, অব্যবস্থাপনাসহ বিভিন্ন অভিযোগে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার রায়কে বদলি করা হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার (১৩ আগস্ট) দুপুরে তাকে বরিশাল মেডিকেল অ্যাসিসট্যান্ট ট্রেনিং স্কুলের (ম্যাটস) অধ্যক্ষ হিসেবে বদলির আদেশ জারি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এ ঘটনাটি ন্যক্কারজনক মন্তব্য করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল বাশার মো. খুরশীদ আলম বলেন, আজই তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জেনারেল ডায়েরি লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে। আগামীতে চাকরির বিধিমালা ও শাস্তি প্রবিধারা অনুযায়ী বিভাগীয় মামলা রুজু করা হবে। এরপর অন্যান্য ব্যবস্থাও পর্যায়ক্রমে নেওয়া হবে।
তবে রোগীর স্বজন ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ ও প্রকাশ্যে অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির অভিযোগে রতন কুমারকে সাময়িক বরখাস্ত না করে শুধু বদলি করার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় স্থানীয়ভাবে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। বদলির মাধ্যমে তাকে কৌশলে বাঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন ওই হাসপাতালের সেবাবঞ্চিত রোগীর স্বজনরা।
জানা গেছে, রোববার ওই হাসপাতালে এসে কাঙ্ক্ষিত সেবা না পেয়ে কয়েকজন সেবাপ্রত্যাশী স্থানীয় বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছে অভিযোগ করেন। অভিযোগ পেয়ে আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থী ও রোগীর স্বজনরা সোমবার (১২ আগস্ট) দুপুরে হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমারের কাছে মৌখিক অভিযোগ করেন।
অভিযোগ শুনেই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন রতন কুমার। সহকর্মীদের সামনে অভিযোগকারীদের গালিগালাজ ও অশ্লীল আচরণ করতে থাকেন। একপর্যায়ে সহকর্মীদের সামনেই নিজের প্যান্টের চেইন খুলে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে হম্বিতম্বি করতে থাকেন। তার অশ্লীল আচরণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে বিষয়টি জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় কর্মকর্তাদের জানান।
এদিকে বদলির বিষয়টি নিশ্চিত করে সিরাজগঞ্জের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. রতন কুমার রায় বলেন, উৎপীড়ন কথাবার্তার মাধ্যমে গত দুদিন থেকে চিকিৎসকদের ঘুম হারাম করে রেখেছেন শিক্ষার্থীরা। অথচ সামান্য বিষয় নিয়ে উল্টো তাকেই শাস্তি প্রদান করা হলো।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যার বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসকদের ফাঁকিবাজি ও নানান অনিয়মের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। রোগীদের হয়রানি, কর্মক্ষেত্রে ফাঁকি দিয়ে সরকারি কর্ম ঘণ্টায় অন্যত্র প্রাকটিস, ওষুধ কোম্পানি, ক্লিনিক মালিক ও দালালদের সঙ্গে সখ্য ও অর্থের বিনিময়ে ‘সাধারণ জখমী’ রোগীদের ‘গুরুতর জখমী’ রোগীর সার্টিফিকেট দেওয়াসহ নানা গুরুতর ডাক্তারি সার্টিফিকেট প্রদানের অভিযোগ রয়েছে বেশি রভাগ চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। এমনকি, ময়নাতদন্তের পরীক্ষার ফলাফলে নয়ছয় করারও অভিযোগ রয়েছে কারো কারো বিরুদ্ধে। তত্বাবধায়কের আশ্রয়-প্রশয়ে হাসপাতালে আওয়ামীপন্থী চিকিৎসকদের একটি সিন্ডিকেট দীর্ঘদিন থেকেই সার্টিফিকেট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত থাকলেও কোনো প্রতিকার নেই।